ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নতুন বিধানের সুপারিশ

ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচনী আইনে নতুন বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।
বর্তমান আইনে প্রার্থীরা ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে পারেন, তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এ কারণে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নতুন বিধান সংযোজনের সুপারিশ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সম্প্রতি তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব প্রকাশ করেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনতে এই সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে।
এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে আগামীকাল শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার। আলোচনা থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়ন ও জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি করতে পারবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে এমনিতেই বিদ্যমান আরপিওতে পরিবর্তন আনতে হবে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচনের সময় পোলিং এজেন্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা ভোটারদের শনাক্তকরণ, অনিয়ম প্রতিরোধ এবং জাল ভোট রোধে ভূমিকা রাখতে পারেন। তবে বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্যদের এজেন্টদের দায়িত্ব পালন করতে বাধা দেওয়া হয়। ভোটের আগেই ভয়ভীতি প্রদর্শন, কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, এমনকি কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তাদের অনেক প্রার্থী পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। হুমকি ও গ্রেফতারের ভয়ে অনেকে এজেন্ট হতে রাজি হননি। সে সময়ের নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তারা বিরোধী দলের কোনো পোলিং এজেন্ট দেখতে পাননি।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনুরূপ পরিস্থিতি দেখা যায়। এটি মূলত আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ছিল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বাইরে অন্যদের এজেন্ট দিতে দেওয়া হয়নি। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, তিনি কেবল নৌকার এজেন্টদেরই দেখতে পেয়েছেন।
এ কারণে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন বিধান সংযোজনের সুপারিশ করেছে, যা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।